দুর্ঘটনার দায় এড়াতে আহত ছাত্রকে নদীতে ফেলে দেন বাসকর্মীরা মানবতা মনুষত্ব আজ বিলুপ্ত প্রায়
আমি সকাল থেকে একটা নিউজ পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। ছেলেটার নাম পায়েল। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। বিবিএ ডিপার্টমেন্টে৷
চট্টগ্রাম থেকে আসার পথে হানিফ বাস রাস্তায় জ্যামে পরে। দীর্ঘ জ্যাম, এই সুযোগে বাথরুম করার জন্য অনেকেই নামে, নেমেছিলো পায়েলও।
বাসে ওঠার সময় বাসের অটো গেট খুলতে গিয়ে নাকে মুখে আঘাত পায় পায়েল। নাক মুখ ফেটে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলেটি রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
তার পরে যাওয়া দেখে হানিফের হেল্পার জনি চালককে জানায় মারা গেছে। চালক স্টিয়ারিং থেকে নেমে দেখে অজ্ঞান রক্তাক্ত ছেলেটিকে। হাসপাতালে নিয়ে আসলে ঝামেলা হবে, তাই ভিন্ন প্লান করেন তারা।
তারপর যা ঘটেছে, তা যে কোন বিকৃত খুনিকেও হার মানাবে।
সুপারভাইজার, চালক, হেলপার মিলে পায়েলকে উঠায়। পায়েলকে ভাটেরচর ব্রিজের উপর থেকে পানিতে ফেলে দেয় তিনজন।
ফেলে দেবার আগে, ইট দিয়ে তাঁর চেহারা থেতলে দেয় তাঁরা, যাতে লাশ সনাক্ত না করা যায়।
অথচ তখনও ছেলেটা জীবিত ছিলো। পায়েলের আত্মীয় স্বজন লাশ চিনতে পারেনি প্রথমে, এতটাই বিকৃত করা হয়েছিলো চেহারা।
রাত তখন সাড়ে চারটা, প্রায় যাত্রীই ঘুমন্ত ছিলো। আর এসি বাসের ভেতরে এয়ার টাইট এনভায়রোমেন্টে বাইরের ঘটনা সঠিক শোনা এবং বোঝা যায় না। তবে দুজন যাত্রি দেখেছিলো পায়েলকে নামতে, কিন্তু বাস ছাড়ার সময়ও তাঁকে উঠতে না দেখে চালককে জিজ্ঞেস করে কই সে, চালক উত্তর দেয় সে আসবে না।
সুপারভাইজার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং চালক এবং হেলপারের সম্পৃক্ততাও নিশ্চিত করেছে।
আমি শুধু ভাবছি, মানুষের দ্বারা এটা কিভাবে সম্ভব। ঠান্ডা মাথায় এভাবে খুন। তাঁকে নদীতে ফেলে দেয়া, দেয়ার আগে নাক মুখ থেতলে দেবার মত বীভৎস কাজ কিভাবে করে তাঁরা!?
লোকাল বাস গুলোর হেলপারদের খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেছেন কখনো? তাঁদের চোখের চাহনি। তাঁদের শারীরিক ভাষা। অরুচিকর অঙ্গভঙ্গি কিংবা মন্তব্য বিশেষ করে রাস্তার পাশে অপেক্ষারত কোন মেয়েকে দেখলে। কেমন একটা দৃষ্টি বাসে থাকা মেয়েদের দিকে। লোকাল চালকের বেপরোয়া বাস চালানোতে কিছু দিন আগেও একজন জীবন দিলো। এদের দেখলে আমার অসুস্থ মনে হয়। এরাই এক সময় দূরপাল্লার বাস গুলোতে জায়গা করে নেয়।
এক দল খুনী মানুষদের ভেতর আমরা বসবাস করি। চারিদিকে পটেনশিয়াল রেপিস্ট, মার্ডারারদের মাঝে আমাদের বসবাস। বাবা মা কেউ জানে না সকালে বের হওয়া তাঁর ছেলেটা, তাঁর মেয়েটা রাতে ঠিক মত ঘরে ফিরবে কিনা! সন্তান দুশ্চিন্তায় পরে তাঁর চাকুরী ব্যবসায়ী বাবা একটু দেরীতে ফিরলে। একা মাকে কোথাও যেতে দিতে ইচ্ছে করে না। এক মাত্র বোনকে কোথাও একা আজও ছাড়তে মন চায় না। কারন এক দল খুনী অমানুষদের ভিড়ে আমরা হাঁটছি।
—দেশটা খুনীতে ভরেগেছে, মানবতা মনুষত্ব আজ বিলুপ্ত প্রায়….!!!